টকটকে লাল লিচুর কাহিনী জানলে চমকে উঠবেন! ভুলেও কিনবেন না। টকটকে লাল লিচু দেখেই কিনতে ছুটছেন ক্রেতা।জলে চোবাতেই উধাও রক্তবর্ণ। পহেলে দর্শনধারী।এই মন্ত্রেই বাজিমাত করতে চাইছে ফল ব্যবসায়ীরা। লিচুকে চুবিয়ে রাখা হচ্ছে লালরঙের গামলায়।
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ দত্ত জানিয়েছেন, যে কৃত্রিম রঙে লিচু চুবিয়ে রাখা হয় সেগুলো সবই মেটাল অক্সাইড। কপার, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়ামের মতো ক্ষতিকর ধাতু মিশে থাকে ওই রাসয়নিকে।
যা শরীরে গিয়ে সর্বনাশ হচ্ছে যকৃৎ, কিডনির। বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে, মূলত তিন ধরনের ক্ষতিকর রং লিচুতে মেশান হয়। রেড অক্সাইড, রোডামাইন বি আর কঙ্গো রেড।
টকটকে লাল করতে দেওয়া হয় কঙ্গো রেড। যা কিনা বেনজিডেনডিয়াজো ন্যাপথেলামাইন এবং সালফোনিক অ্যাসিডের সোডিয়াম সল্ট। প্রত্যেকটি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
হাল্কা গোলাপি আভা আনতে দেওয়া হয় রোডামাইন বি। জনস্বাস্থ্য আধিকারিক অনির্বাণ দলুই জানিয়েছেন, এই ধরনের রং নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি শরীরে জমতে শুরু করলে বিষক্রিয়া হয়। তাকে বলে কিউমুলেটিভ টক্সিসিটি।
পরবর্তীকালে এ থেকে লিভার বা কিডনির সমস্যা হতে পারে। কঙ্গো রেড বা রোডামাইন বি কতটা ক্ষতিকর, তার পরীক্ষাও হয়েছে। গবেষণাগারে টানা ২৮ দিন ইঁদুরকে এই রাসায়নিক দিয়ে দেখা গিয়েছে যকৃতের দফারফা হয়ে গিয়েছে ক্ষুদে প্রাণীটিরও। চিকিৎসকরা একে বলছেন ‘জেনো টক্সিক এফেক্ট।’
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শুভ্র মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সমস্ত লিচু টকটকে লাল হয় না। পশ্চিমবঙ্গে তিন ধরনের লিচুর ফলন প্রচুর। বেদানা, বোম্বাই আর চায়না। এর মধ্যে বোম্বাই লিচু শুধুমাত্র পাকলে টসটসে লাল হয়। অন্যান্যগুলো অতটা লাল হয় না।
অধ্যাপকের বক্তব্য, বাজারি কৃত্রিম রঙে থাকে সিলিকা। রং আরও চকচকে করার জন্য কাচের গুঁড়ো বা অভ্র মেশানো হয়। জল রঙের জন্য ব্যবহৃত অধিকাংশ রং ক্ষারধর্মী। তা ক্ষতিকর। লাভের আশায় ফল পাকার আগেই পেড়ে নিয়ে রাসায়নিকের ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, লাল রং করতে carmoisine erythrosine ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে রাজ্য সরকারের। তাও যথেচ্ছভাবে নয়, প্রতি কেজিতে ৪ মিলিগ্রাম মাত্র মেশানোর অনুমতি রয়েছে। কিন্তু এই রংগুলি অত্যন্ত দামি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা অননুমোদিত রংই মিশিয়ে দিচ্ছে।